স্যুররিয়াল দৃশ্য মুখোমুখি দাঁড়ানোর পর
চাঁদ আর জোছনা সেরে নিচ্ছে রেওয়াজ, হোস্টেলের ছাদে। আমার ব্যাগ গোছানো শুরু, ট্রেনের টিকিট কেটে কোথাও চলে যাবো। কুকুর, আর বেড়ালের তাড়া খেয়ে পা ছড়িয়ে বসবো রাস্তায়; কুয়াশার দিনে কার্ডিগান রাখবো কাছে। প্রেমের আলামত দেখলে মুখোমুখি বসবো তার, ঈষৎ একান্তে; পুনরায় ঝগড়া হবে, ধাক্কা খাবো। লজিক পড়বো না, শুনতে থাকবো অডিও ক্যাসেট। সম্ভব হলে বেশি বেশি হ্যাবা হবো। কলিংবেল না চেপে দাঁড়িয়ে থাকবো। জোড়া জুতো থেকে ওলট-পালট করবো পা, পথ ভুল হলে অন্তরঙ্গ করবো আচার-নিষেধ।
মনে মনে বিবাহ ডাকবো। বিরহ এলে মাগরিবে উবু হবে মধু, সাধের বাছুর— ফুল আর ঘাস থেকে সরিয়ে নেবে মাথা।
তুমি বলবে, ফিরে তাকাবো না। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে আমি বলবো, কোথাও যাবো না।
আমরা মিডলক্লাস পিপল : আমাদের চোক্ষে গভীর বৃষ্টি, হৃদয়ে বরষাকাল
বৃষ্টি নিয়ে ফ্যান্টাসির কিছু নেই। পৃথিবীতে বৃষ্টি নামবে, মেঘ করবে আকাশ জুড়ে, ঘুরে ফিরে আসবে রোদ।
রোদ থাকাকালীন প্রচণ্ড ভ্যাবসা গরমে যখন জীবন অতিষ্ট হবে, পল্লী বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেবে বিদ্যুৎ সাপ্লাই, কিংবা বৃক্ষরাজি যখন আর হাওয়া দেবে না তখন বৃষ্টি যদি আসে-সেই বৃষ্টি শান্তি দেবে কাউকে কাউকে।
বৃষ্টি নিয়ে মাতামাতি করে আমাদের মতো মিডলক্লাস পিপল, যারা, গরমে হাঁসফাঁস করে, রোদে রিক্সায় ঘুরতে যাদের কষ্ট হয়।
যারা গাছতলাতে বসে প্রেম করে তাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি দরকার।
বৃষ্টি প্রেমিক-প্রেমিকাদের রোমান্টিক হবার পথে মধ্যস্থতা হিসেবে কাজ করে।
যারা দূরে দূরে প্রেম করে, বৃষ্টি হলে যাদের দেখা হবার চান্স নাই তারা মোবাইল ফোনে করে রোমান্টিকতার বিনিময়।
যাদের জীবন দারিদ্রসীমার নিচে,
তাদের জন্য বৃষ্টি খুব খারাপ। যাদের ঘরের ওপর ছনের চাল,
টিন দিয়ে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে যাদের ঘরে- বৃষ্টি তাদের জন্য কোন মঙ্গল আনতে পারে কি?
যদি তাদের দু একটা জমি থাকে,
যদি ক্ষরায় নষ্ট হয় ফসল তবে সেই বৃষ্টি স্বস্তির।
দারিদ্রসীমার নীচে যারা বাস করে তাদের তো জমি থাকে না। জমি থাকে মধ্যবিত্তদের। নিম্নবিত্তরা ভিজে ভিজে মধ্যবিত্তদের জমিতে কাজ করে।
বিত্তবান যারা, যারা প্রেম করে বন্ধ ঘরের ভেতর বৃষ্টিতে তাদের কিছু আসে যায় না।
যারা লংড্রাইভে নিয়ে যায় প্রেমিকাকে, তাদের লংড্রাইভে যদি বৃষ্টি আসে তবে রাস্তাঘাট থাকে আরো ফাঁকা। ফুল স্পিডে গান বাজাতে বাজাতে বৃষ্টির গল্প করে তারা। বৃষ্টি তাদের জন্য বাড়তি সুযোগ এনে দেয়। এই সুযোগ কাছাকাছি আসার নয়। যারা কাছাকাছি থাকার নিমিত্তে গিয়েছে লং ড্রাইভে তাদের কাছে নতুন করে সুযোগ যাবার আছে কি কিছু!
আমরা যারা করি না কিছু , যাদের কিছু করার নাই,
বৃষ্টি আমাদের জন্য খুব দরকার। বৃষ্টি হলে আমাদের বুকের ভেতর কিছু একটা বাজে; আমাদের মতো সো কল্ড কিছু না করা পিপলদের চোখ আরো চকচক করে।
আমরা গাছের পাতাদের আরো সবুজ দেখতে পছন্দ করি। নিয়মিত সমুদ্রে যাবার পয়সা আমাদের নাই, অথচ-
চারিদিকে জল থৈ থৈ করলে মনের ভেতর সমুদ্র নাচে।
বৃষ্টি এবং সমুদ্রের নাচনের সাথে সাথে
আমাদের মনকে নাচাই আমরা।
আমরা চিঠি লিখি আমাদের প্রেমিক/ প্রেমিকাদেরকে।
চিঠিতে লিখি-
বৃষ্টিতে মন ধুয়ে নিও,
চুল ধুয়ে নিও,
আর ধুয়ে নিও ফুল
কুলনেস
হাসনুহেনা মাঝরাত্তিরে ভাসাইয়া নিলো আমারে, আলপথে বাঁশি যে বাজাইলো তার জন্য—আমার শরীর হইলো টলোমল। সে মদন-মনশ্যাম, মাংসের দোকান থেকে লড়াকু মোরগ কিনে দেব তাকে। তাকে দেখাবো মাঠের ধু ধু, বোকা বাকশো, স্কেচ করা কুলনেস আর ইত্যাদি, ইত্যাদি....
সম্পর্ক; সুবহে সাদিক হবার আগে যাকে ঝরে যেতে হয়
মালতীলতার সাথে মাধবীলতার সম্পর্কটা কেমন হতে পারে জানতাম না।
অভিজ্ঞতা বেড়েছে; বুঝতে শিখেছি মালতীলতা এবং মাধবীলতা জমজ বোন। তারা টলমলে সুবাসিত ফুল, প্রেমিকের ডাকে পৃথক ভাবে ফোটে।
যে প্রেমিকদের চিঠিতে রোজ মাধবীলতা-মালতীলতা ফোটে তাদের মনে ছলাৎ ছলাৎ হাওয়া। হাওয়ার পালকে ভাসিয়ে দেয়া যায় সমস্ত চিত্রকল্প।
চিত্রকল্প গুলোর ডাক নাম বসন্ত। এবং বসন্ত একটি অস্পষ্ট শব্দ, অন্ধকারে বাড়িয়ে দেয় হাওয়াময় গর্জন।
অভিজ্ঞতায় জেনেছি গর্জন স্বচ্ছ হলে ক্রন্দন শোনা যায়।
তবে কি রাত ফুরিয়ে গেলে ক্রন্দনরত ফুলেরা মরে যায়?
রওশন
আমি আর কোথাও যাইতেছি না, ফলত—যারা এইদিকে আসতেছে তারা ক্ষণস্থায়ী। তাদের তরী ভাসায়ে রাখি—মর্মর, ঝরঝর, কুয়াশা কাতর। তাদের কেউ নয় অতি প্রিয়জন; বলে রাখি—বহু দূরে যারা চলে গ্যাছে তারা—হোসেন রওশন।
রওশন পাখি নন, ফুল নন; প্রায় পৌষে তিনি হাসতেন ছলছলাইয়া—তার নীল কালো হাত জেল গেটে দেখা। সেন্ট্রিকে বললাম—ঘাড় ঘুরানো পাপ হবে, আজ থেকে শহর থমথম।
তাকায়ে আছি; যদি বাস থেকে হাত নাড়ান বন্ধু রওশন।
নাদিয়া জান্নাত,
কুড়িগ্রাম