মোহাম্মদ আলীর একমাত্র মেয়ে লিলির আজ বিয়ে।গভ:মেন্ট প্রাইমারী স্কুল টিচার শামীমের সঙ্গে।বেশ জাকজমকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।বাড়িভর্তি মেহমান,হাসি আনন্দে বাড়িঘর মুখরিত।সময়মতো বর এসে মজলিসে আসন পেতে বসল।বরযাত্রী মজলিস পরিপূর্ণ। চারদিকে গান বাজনা বেশ আনন্দঘন মুহূর্ত।বিয়ে পড়ানোর প্রস্তুতি চলছে।ঠিক সেই মুহূর্তে জিল্লু নামের এক ছেলে তার দলবল নিয়ে উপস্থিত।এসে বলে লিলি তার বিয়ে করা বউ।সে তাকে নিতে এসেছে।
কথাটা শোনামাত্রই মোহাম্মদ আলীর রক্ত গরম হয়ে উঠল।ইচ্ছে করছে জিল্লুকে জ্যান্ত কবর দিতে।সে ছুটে যাচ্ছে তার গায়ের দিকে।তখনি লোকজন ধরাধরি করে তাকে থামাল।তারপর সমাজপতি হাবিব উল্যাহ বলল,
আলী ভাই আমি বলি কি,তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস কর সত্য মিথ্যা।তারপর সিদ্ধান্ত নিও কী করবে?
ঠিক বলেছেন হাবিব ভাই।
মোহাম্মদ আলী ছুটে গেল মেয়ের কাছে।তারপর কড়া ভাষায় জিজ্ঞেস করলো।
লিলি তুই আমার একমাত্র মেয়ে।তোর সুখই আমার সুখ।আমি চাই তুই সারাজীবন সুখে থাক।কিন্তু তুই এ কী করলি?
কী করলাম বাবা?
জিল্লু নামের একটা ছেলে এসে বলছে, সে নাকী তোর স্বামী।তোদের নাকী বিয়ে হয়ে গেছে।শুধু তাই নয় সে কাবিন নামা ও দেখাচ্ছে।এবার তুই বল ঘটনাটা সত্য না মিথ্যা?
আজকাল এধরনের ঘটনা অহরহ ঘটে।লাভ করে ছেলে-মেয়ে গোপনে বিয়ে করে।আবার অবিভাবকের চাপে সবকিছু অস্বীকার করে।দুজনের একজন যদি বিয়ে অস্বীকার করে,তা এমনিতে বাতিল হয়ে যায়।রাখার ক্ষমতা কারো নেই।অনুরুপভাবে আজ লিলিও তার গোপন বিয়েকে অস্বীকার করলো।স্পষ্টভাবে বলল,
বাবা জিল্লুর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।বিয়েতো দূরের কথা।আমি জিল্লু নামের কাউকে চিনিনা।
জোর গলায় মোহাম্মদ আলী বলল,
আপনারা শুনলেনতো আমার মেয়ে কি বলেছে?
জ্বি শুনেছি।
তাহলে এবার ভালোই ভালোই বলুন আর ক্যাচাল না করে জিল্লুকে এখান থেকে চলে যেতে। তানা হলে আমি ইভটিজিং মামলা দেব।
জিল্লুও হারবার পাত্র নয়।জোরগলায় বলে গেলো,
আমি এর শোধনেব একদিন।
যাক আপাতত পরিবেশ শান্ত হলো।শামীম মাস্টার আর লিলির বিয়ের কাজ সম্পন্ন হলো।
লিলি মাস্টারের বউ হয়ে সেই বাড়িতে অবস্থান করলো।বাসর ঘরে মাস্টার লিলিকে জিল্লুর ব্যাপারে অনেক কথা জিজ্ঞেস করলো।লিলি চুপচাপ কোনকিছু স্বীকার করলো না।মাস্টার এই নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করলো না।যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো।
পরদিন জিল্লু আবার লিলির ব্যাপারে মাস্টারকে অনেক কানপড়া দিলো।শুধু তাই নয় দুজনের একান্তে কাটানো অনেকে নেগেট ছবি দেখাল।কসম কেটে বলল সত্যি তাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে।সে লিলিকে ছাড়া বাঁচবে না।সে তাকে চাই।মাস্টার কিন্তু এসব কথায় কান দিলো না।কারণ এই ডিজিটাল যুগে নোংরা ছবি বানানো কোন ব্যাপার না।সে তার মতো চলছে বউকে কোনরুপ সন্দেহ করছে না।কিন্তু বউ তাকে সন্দেহ করা শুরু করেছে। কোন কারণে স্কুল থেকে একটু দেরীতে ফিরলে কৈফিয়ত চাই,এতো দেরী হলো কেনো?
মাস্টার হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলে,
স্কুলে একটু কাজ ছিলো তাই দেরী হয়েছে।
তাই বলে এত দেরী?
এত দেরী কই দেখলে?
শোন আর কখনো দেরী করবে না?
ঠিক আছে করব না।
কোন মেয়ের সাথে কথা বলবে না।বিয়ের আগে যা করেছে করেছ।এখন থেকে আমার কথা ভাববে।কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না।
ঠিক আছে তাই হবে।
প্রমিস কর?
প্রমিস করলাম।তুমি ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকাব না।
লিলি আপাতত শান্ত হলো।কিন্তু মন থেকে সন্দেহ দূর হলো না।মাস্টার যতক্ষণ ঘরে থাকে সে খুশি।ঘর থেকে বের হলে তার ধারণা সে অন্য কারো হয়ে যাচ্ছে।পরনারীতে আসক্ত..।
এসব ভাবনাগুলো তার মাথায় দোল খাচ্ছে।যতই দিন যাচ্ছে,ততই সন্দেহের মাত্রা বাড়ছে।যে কোন ব্যাপার নিয়ে সে মাস্টারকে সন্দেহ করছে।স্কুল, বাজার যে কোন জায়গা থেকে আসুক সে মাস্টারকে যাছাই করে।মাস্টারের মনে ছলচাতুরী নেই।তাই সহজ ভাষায় সে কারণ দর্শায়।কিন্তু লিলি বিশ্বাস করতে চাইনা।তার ধারণা সে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়াচ্ছে।তার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।তাকে ভালোবাসে না।এই নিয়ে তাদের সাথে রোজ রোজ কথাকাটাকাটি হয়।একদিন দুদিন রোজ রোজ এসব ক্যাচাল কার ভালো লাগে বলুন? সে বাধ্য হয়ে একদিন তার শ্বশুরকে বিচার দেয়।তিনি মেয়েকে ভালোভাবে বুঝান।
এগুলো তোর মনের ভুল।শামীম খুব ভালো ছেলে।তার সাথে অন্যকোন মেয়ের রিলেশন নেই।সে শুধু তোকে ভালোবাসে।
সত্যি বলছ বাবা?
হুম মা সত্যি বলছি।
তাহলে মাস্টার দেরী করে বাসায় ফেরে কেনো?
আহা বোকারমতো কথা বলছিস নাতো? পুরুষ মানুষ বাইরে কত কাজ থাকতে পারে।তাই আসতে দেরী হয়।এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কী আছে?আমাকে কথাদে এই নিয়ে আর কখনো বাড়াবাড়ি করবে না?
ঠিক আছে বাবা কথা দিলাম।আর কখনো বাড়াবাড়ি করব না।তবে একটা কথা..।
বল মা কী কথা?
যদি মাস্টার কখনো কারো সাথে সম্পর্ক করে আমি তা মেনে নেব না।
সে তখন দেখা যাবে।
লিলি আপাতত শান্ত হলো।তারপর স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসল।কিছু সময় ভালোভাবে কাটলেও ফের তার মনের ভিতর সন্দের জাল তৈরী হলো।সে কিছুতেই মাস্টারকে বিশ্বাস করতে পারছে না।একদিন সে চলে গেলো তার স্কুলে।গিয়ে দেখল মাস্টার অফিস কক্ষে বসে আছে।পাশাপাশি দুজন ম্যাডাম বসে আছে।তারা অফিশিয়াল আলোচনায় ব্যস্ত।এক পর্যায়ে তারা হেসে উঠল।আর সেই দৃশ্যটা লিলি এসে দেখল।সে কী আর থেমে থাকে মাস্টারের জামার কলার চেপে ধরে টেনে হেঁছড়ে বের করে বলে,
এই তোর শিক্ষকতা না?হাসি তামাসা প্রেম ভালোবাসা,ঢলাঢলি রঙ্গলীলা...।
ছি: ছি ঘরে বউ থাকতে এসব কী?
আর ও হ্যাঁ ম্যাডাম আপনাদের লজ্জা করলো না।মাস্টারের সাথে....।ছি: ছি:...।
সবাই চুপ কেউ কিচ্ছু বলছে না।হঠাৎ শামীম মাস্টারের বউয়ের এমন আচরন কেউ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারলো না।সবার ধারণা তার মাথায় ছিট আছে।তানা হলে অফিসে এসে কেউ এমন অস্বাভাবিক আচরন করে।
মাস্টারকে ইচ্ছেমতো ঝাড়লো।মাস্টার কিছু বলল না।কারণ বলতে গেলে উল্টো রিয়েকশন হবে।পাছে তার সম্মান আর ও যাবে।তাই চুপচাপ সবকিছু হজম করে নিলো।তার ভাবসাব বুঝতে পেরে অন্য শিক্ষকরা বলল,
স্যার বাসায় ফিরে যান।ভাবীকে শান্ত করুণ।
মাস্টার বাসায় ফিরে গেল।সে বউকে বুঝাতে চাইল।কিন্তু সে কী! বউ বুঝলেতো? সে রাগে বোম।ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর...। অবশ্য এগুলো তার বাবার বাড়ি থেকে এনেছে।মাস্টার বাঁধা দিলে হিতে বিপরীত হবে।তাই সরল রেখার মতো দাঁড়িয়ে আছে।কোন উপায় না পেয়ে শ্বশুরকে খবর দিয়েছে।ততক্ষণে অনেক জিনিসপত্র ভাঙচুর হয়ে গেছে। মোহাম্মদ আলী তড়িৎ গতিতে মেয়ের বাড়িতে উপস্থিত হলো।তারপর মেয়ে জামাই দুজনের জবান বন্দি শুনলো। সবকথা শোনার পর বুঝতে পারলো কে দোষী? নিজের মেয়ের আচরণ শুনে লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গেলো।মেয়ের ভুল স্বীকার করে সবকিছু মিটমাট করে দিয়ে গেলো।
কিছুদিন ভালো কাটলে ফের সে সেইম ঘটনা ঘটায়।আবার বৈঠক,তারপর মিটমাট হয়। এভাবে কেটে চলেছে শামীম মাস্টারের জীবন।এরমাঝে কবছর কেটে গেলো।লিলি দুসন্তানের মা হলো।কিন্তু মন থেকে সন্দেহ দূর হলো না।একদিন পাশের বাসার ভাবী মাস্টারকে কিছু বাজার সদাই আনতে দিয়েছে।মাস্টার সদাই এনে বাসায় দিতে গেলে লিলি তা দেখে ফেলে।এই সেরেছে বাসায় গিয়ে ভাবীর সঙ্গে নিজ থেকে ঝগড়া শুরু...।
তার স্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে তানা সে তার বাসায় আসল কেনো?ভাবী বুঝাতে চেষ্টা করছে,
প্লিজ ভাবী উত্তেজিত হবেন না।আমার বাসায় মেহমান এসেছে।তাই ভাইয়াকে বাজার আনতে দিয়েছিলাম,আর কিছু না।
ও এখন বনিতা করা হচ্ছে, ভাবছেন আমি কিচ্ছু বুঝি না।তলে তলে আমার জামাইর সঙ্গে....।লজ্জা করেনা স্বামী থাকতে পর পুরুষের সঙ্গে...।ছি: ছি আমার ভাবতে ও ঘেন্না হচ্ছে।
আর ও কিছু আজে বাজে কথা বলে সে স্বামীকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।এরপর তার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়ে।
এভাবে সে মাস্টারকে সন্দেহ করে।সে মাস্টার তার সাথে অনেক ছাত্র ছাত্রীর মায়েরা প্রয়োজনে কথা বলতে আসে।বউয়ের চোখে পড়েছে সন্দেহ করা শুরু করেছে।আশ-পাশের কোন মহিলা দেখা হলে কুশল বিনিময় করেছে,সেরেছে।বউ বলছে মাস্টারের সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক।এই নিয়ে চলে গৃহযুদ্ধ।বাজার কিংবা স্কুল থেকে ফিরেছে।মাস্টারের জামা নাক দিকে শুকে দেখছে লেডি পারফিউমের গন্ধ পাচ্ছে কি না।এভাবে রোজ রোজ মাস্টারকে চার্চ করছে।পাড়া প্রতিবেশী নারীদের সাথে স্বামীকে কেন্দ্র করে ঝগড়া করছে। মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছে।মাস্টার আর সহ্য করতে পারছে না।
তার বাবা-মা,আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ফ্রেন্ড সার্কেল, তার সহকর্মী শিক্ষকবৃন্দ সবার কাছে সে অপমানিত লজ্জিত।বউয়ের এই আচরণের জন্য সবাই তাকে অপমান করে কথা বলছে,এতে সে সবার কাছে লজ্জিত।কারো সাথে জোর গলায় কথা বলতে পারছে না।সবাই তাকে নালিশ দিচ্ছে।সবার এককথা এমন সন্দেহভাজন বউ নিয়ে আর যাই হোক সংসার করা যায় না।মাস্টার ও ভেবে দেখল সবাই ঠিক বলেছে। দিনেদিনে সন্দেহের মাত্রা বাড়ছে,বৈ কমছে না।একে নিয়ে আর সংসার করা সম্ভব না।কী আর করা দুপক্ষ আলোচনা সাপেক্ষে বৈঠকে বসে এই সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটায়।হয়ে যায় ডিভোর্স। মাস্টার মুক্তি আজ থেকে কেউ তাকে আর "সন্দেহ" করবে না।দুমেয়েকে সে তার কাছে রেখে দেয়।