হম্বিতম্বি
------------------------------ ----------------------------
গতকাল দেখা হয়েছিল
এক হম্বিতম্বির সঙ্গে দেখা হয়েছিল
সে কথা বলেছিল আমাকে নিয়ে,আমাদেরকে নিয়ে
সে কথা বলেছিল সম্প্রদায় এবং জাত-ধর্ম নিয়ে
আমি সামান্য ব্যবসায়ী, শব্দ-ব্যবসায়ী
কিছু মানবতার টুকরো নিয়ে
অলৌকিক জ্যোৎস্নায় উজ্জ্বল করি
সম্পর্ক খুঁজে খুঁজে কাছাকাছি আসি
যতদূর কাছে আসা যায়, যতটুকু ছোঁয়া যায় তাকে
আর হৃদয়ের অন্ধকার পরিষ্কার করি
এভাবেই কয়েক লাইন এগিয়ে গেলে
নিজেও এগিয়ে যেতে থাকি
শব্দের ভ্রমর শুধু আমার নিভৃত বোধের বসন্ত বাগানে
গুঞ্জন করে প্রহর গুনে গুনে কোনো নতুন ভোরের অপেক্ষায়
হম্বিতম্বির কোনো জবাব হয়?
সেও দেখি অদৃশ্য ছুরি নিয়ে তেড়ে আসে
আমার স্বরলিপি আতঙ্কিত হয়
আমার গানেরা থরথর কাঁপে!
বন্ধ দরজার বাইরে
____________________
তোমার সৌন্দর্য মন ছুঁয়ে যায়
কিন্তু ভিতরে ঢুকতে পারি না
ভিতরে ঢোকার মন্ত্র জানি না
বন্ধ দরজার বাইরে শুধু আমি ও আমার ছায়া
বিকেল দেখে দেখে, বিকেল দেখে দেখে
রাত্রির দিকে যাই
বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলি,অপেক্ষার সঙ্গে কথা বলি
ধৈর্যের দোকানে চা খাই
মনমরা পাখিরা ক্লান্তি নিয়ে ফিরে আসে
মানব সভ্যতার রোদে ঝরে পড়ে আসক্তি
তীব্র হয় প্রগাঢ় চুম্বনের ডাক
তবু কোনো সর্বনাশ ছুরি হাতে মঞ্চে উঠে যায়
যেকোনো সময় তবে সংবাদ হতে পারি
যেকোনো সময় হাওয়া হয়ে যাই
তোমার ঐশ্বর্যের পাশে বীভৎস ইন্দ্রিয়গুলি
গোপনে গোপনে আজও কোলাহল করে....
সভ্যতার রাত্রি
------------------------------ ------------------------------ --------
কয়েকটি ধর্ষকের মুখ স্পষ্ট হয়ে ওঠে
সভ্যতার রাত্রি জুড়ে প্রহরীবিহীন দেশ
সত্যবাদী প্রাচীন আলোরা নিভে যেতে থাকে
শুধু ধর্ষিতার ক্রন্দন ছড়িয়ে দেয় বাতাস
হ্রদের পাশেই আমরা জীবিত মেষপালক
নিজেদের মেষগুলিকে ঘুমিয়ে রাখি
আর রাত্রি কাবার করতে করতে
অন্যরাত্রির দিকে যাই
রাষ্ট্র তবু একটা মাঠ, মাঠময় পাহাড়-পর্বত, অরণ্য-নদী-জলাশয়
সিংহের পোশাক পরা কোনো কোনো জন্তু
ময়ূরের কৃত্রিম শিখা লাগানো পাখি
মাঝে মাঝে শূন্যে উড়ে যাওয়া বাজ
ছলাকলা আর কৌশলগুলির ভেতর
আমরা ধোঁয়া উড়িয়ে দিই
অসহ্য দিনগুলি অস্বচ্ছ হয়ে ঘুরপাক খায়
ধর্ষকেরা মালা পরে নেমে আসে ঈশ্বরের নতুন শিবিকায়
অরণ্যরাষ্ট্র
------------------------------ -----------—
অনেক জোনাক আছে আমাদের
দুর্যোগের রাতে তাই জ্বলবে
একে একে সব অধিকার কেড়ে নিলে
তবুও লড়াই চলবে
রাষ্ট্র যদিও অরণ্য, অহরহ গর্জন শুনি
কখনও শিকার হই, কখনও খেচর হয়ে উড়ি
বিপন্নতা আসে আর মুখোশ পরে হাসে
আতঙ্ক খুঁটে খুঁটে রোজ নিরিবিলি খোঁজ করি
কে আছো? চারিপাশে অন্ধকার
রক্তাক্ত হাতে ঘাতকের তলোয়ার
ধর্মের খাপে ঢাকা নির্দয় নিষ্ঠুর
আলো ধ্বংসকারী হত্যার ঘোষণা করে বারবার
উল্লম্ফন
------------------------------ -------------
এত উল্লম্ফন কখনও দেখিনি
সবাই উঠে আসছে নিরন্তর
সীমাহীন প্রাচুর্যের উল্লাস নগরে
এইখানে অবিরাম সূর্য
সূর্যের বার্ধক্য নেই
কিছুটা যৌনগোধূলি যদিও
গোলাপি রঙের মায়ায়
বিশ্রামের পাঁচালি পাঠ করে
তারপর নিরুক্ত শয়ন ঘর
প্রাণশস্যে ক্ষুধা নিবৃত্তির আয়োজন
এসব তবুও দূরের সমাচার মনে হয়
আমাদের কারুণ্য নির্ভর পর্যটন
কোথাও ঝরনার আবেগ খুঁজে ফেরে
বাহ্যত সংকট শুধু আর সব মৃত্যুযাপন
দুরপনেয় বোধ কাঙ্ক্ষিত শোভার কাছে
মাথা নত করে দেয়
উল্লম্ফন চলতে থাকে
বস্তুত জাগতিক প্রশ্রয়
সবাই নির্মাণ করছে বাড়ি
------------------------------ ------------------------
সবাই নির্মাণ করছে বাড়ি
দেওয়াল তুলছে
উঁচু দেওয়াল
দেওয়ালে দেওয়ালে চোখ
চেয়ে আছে নিষ্পলক
কে কোথায় যাবে?
নিজেকেই ঠিক চেনা যায় না
মনুষ্য আলোকে
পুড়ছে পতঙ্গরা
এ গলি সে গলি বেশ
হিংসা চরছে
দাঁত বেরিয়ে আসছে হিংসার
'প্রবেশ নিষেধ' বাড়ি
দরজা খুঁজে ফিরি
সবাই নির্মাণ করছে বাড়ি
এক-একটি ইঁটের নাম
ধর্ম-সম্প্রদায়
দুর্ভেদ্য কংক্রিট
আলোহীন ঘর
বাতাস
------------------------------
আর পাখি ধরব না,খাঁচাটি ভেঙে ফেলে দেবো
পাখিধরা স্মৃতিগুলি বাইরে বের করে দিয়ে
বলব : আমার আর কোনো জীবিকা নেই
আমার জীবন এখন হাওয়া
যে ফুঁ দেবে—বেজে উঠব
ফুলের সুগন্ধ মিশবে শরীরে
পাতার মর্মর ধ্বনিতে বাজবে সংরাগ
অথবা নির্জনে বয়ে যাব একা একা
সবাই দেখবে শূন্য
অথচ আমি আছি;
সবাই বলবে—কী শীত!
তখনও আমি আছি;
সবাই বলবে—আহা বসন্ত!
তখনও শুধু আমি—আমি—আর আমি…
তৈমুর খান
জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার রামপুরহাট ব্লকের পানিসাইল গ্রামে। পড়াশোনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে।পেশা শিক্ষকতা।প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'কোথায় পা রাখি' প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: বৃত্তের ভেতরে জল, জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা, উন্মাদ বিকেলের জংশন, স্তব্ধতার ভেতর নিরুত্তর হাসি, নির্ঘুমের হ্রস্ব ধ্বনি, আকাঙ্ক্ষার ঘরের জানালা ইত্যাদি মোট ২২টি। গদ্যের বই ১০ টি। পুরস্কার পেয়েছেন: কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য পুরস্কার, নতুনগতি সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি।ঠিকানা :রামরামপুর (শান্তিপাড়া), ডাকঘর রামপুরহাট, জেলা বীরভূম, পিন কোড ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ ।