প্রতীক্ষমাণা ।। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়


অপুদা,আমি খুব কষ্টে আছি। একবার দেখে যাও কেমন ছেলের হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিলে !
আমি দিনরাত কাজের সন্ধানে ঘুরছি লিলি,ঘরেই থাকতে পারি না। কদিন পরেই যাচ্ছি।
গল্পটা একদম পচামার্কা। সেই প্রেম,নায়কের বেকারত্ব,বাড়ির লোকের অমত এবং অন্য পাত্রে বিয়ে।
তাও নায়কের সাহায্যেই। পরে জানা যায় মাকাল জামাইটি পাক্কা মাতাল,অকর্মা,ভিখিরি আর
শ্বশুরবাড়ির টাকায় নবাবি করার স্বপ্নে মশগুল।ব্যস্! মেয়েটির যত অভিযোগ ছেলেটির বিরুদ্ধে।
হয়তো সেটাই সঙ্গত। তারপর বহুদিন পর প্রতিষ্ঠা পেয়েই অপুর মনে পড়লো,লিলি তাকে যেতে বলেছিল
তাও কয়েক বছর আগে। সে এখন গ্রাম থেকে বহুদূরে ধানবাদে থাকে। লিলির বরের গ্রামে সে একবারই গিয়েছিল, প্রীতিভোজে। আজ হারানো প্রেম তাকে টেনে নিয়ে চলে প্রান্তর পাহাড়
আর জঙ্গল পেরিয়ে সীমানার এক ছোট্ট গঞ্জে। ট্রেন থেকে নেমে বাস তারপর একটা শুকনো খাল
পেরিয়ে সে চলেছে। বুকে যেন মাদলের তাল।চা দোকানি বলেছিল জঙ্গলের বিপদের কথা কিন্তু মন তখন
কোনো বাধাই মানে না,ছিনতাই কোন ছাড় ! বিরাট বটতলায় এসে চেনা গন্ধ নাকে লাগে,কারণ জানে না কারো
নূপুরের শব্দ শোনে যেটা চেনা অথচ কার ধরতে পারে না। কে যেন কানের কাছে ফিসফিস করে,
বাঁদিকে চলো সামনে বিপদ। সজাগ হয় সে। কে বলছে কে জানে! তবু এড়ানো যায় না।
হঠাৎ বোঝে কারা যেন ধর ! ধর ! চিৎকার করে তার দিকে ছুটে আসছে। সে ঊর্ধ্বশ্বাসে পালাতে
থাকে...। তার ব্যাগ পড়ে যায়। বেশ কিছুদূর গিয়ে সে থামে। হাঁপায়। ঘাম ঝরে।দেখে চাঁদের
আলোয় সব ভাসছে। অক্লান্ত ঝিঁঝিডাক। অবসন্ন শরীরে চলতে গিয়ে অজান্তেই একটা গাছের ডালে
চোখ যায় আর তার শিরদাঁড়া দিয়ে কালোসাপের মতো শীতল কোনো স্রোত নেমে আসে। একজন মহিলা
গলায় কাপড় জড়িয়ে ঝুলছে !! সে যেন লিলির মতো!!  আর কিছু ঠিক থাকে না। সব ফেলে দুদ্দাড়
সে ছুটতে থাকে,মনে হয় অনন্তকাল... । যদিও একসময় সে
এক অচেনা উঠোনে পড়ে জ্ঞান হারালো। সকালে চোখ মেলে সে যাদের দেখলো সে লিলির
মাতাল বর আর দজ্জাল শ্বাশুড়ি। পরিচয় জেনে ব্যাজার মুখে তারা মন্দ বউয়ের নামে
চোদ্দোটা কাহিনি শুনিয়ে দিল। এও জানিয়ে দিল ওইখানেই ক-দিন আগে অভাগীর মেয়ে শাড়ি গলায় জড়িয়ে...
আর শোনা হয় না। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে । বিধ্বস্ত শরীর মন আর চেতনা নিয়ে অপু ফেরার পথে আনমনে
সেই গাছটির তলায় গিয়ে দাঁড়ায় হয়তো কোনো অদৃশ্য চুম্বকের টানে। নীচে তার ব্যাগ পড়ে,ব্যাগে সব
আছে শুধু লিলির জন্য আনা পিওর সিল্কের শাড়িটা নেই। চমকে উঠে সে আস্তে আস্তে আর ভয়ে ভয়ে
তাকায় উপরের দিকে... আবার চমক ! না সেই ডালে লিলি ঝুলে নেই, তাতে জড়িয়ে আছে অপুর নিজের পছন্দ করে কেনা লিলির জন্য সেই পিওর সিল্ক
শাড়িটি যা ঝুলছে আর হয়তো গভীর বেদনায় দুলছে তাতে কতটা তৃপ্তি বা কত বেদনার মাখামাখি সে বুঝতে পারে না।


জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় : 

পিতা : প্রয়াত ক্ষুদিরাম চট্টোপাধ্যায়, মাতা : শ্রীমতী কুসুমকুমারী দেবী, জন্ম : বাঁকুড়ার কুশমুড়ি গ্রামে। ২৫-০৭-১৯৫৯ তারিখে।

অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক। কবি ও গল্পকার। লিখেছেন অজস্র গল্প,কবিতা,গদ্য,প্রবন্ধ,গান ও নাটক। যেগুলি দেশ,কবিতা পাক্ষিক,কবি সম্মেলন,কলেজ স্ট্রিট, একুশ শতক সহ অজস্র নামি ও অনামি পত্রিকায় প্রকাশিত।
প্রকাশিত গ্রন্থ : 
কাব্যগ্রন্থ : অভীষ্ট শব্দের উজানে এবং ত্রিভুজ সংক্রান্ত সমীকরণ।
অণুগল্প গ্রন্থ : অণু অম্বুবান।
সম্পাদিত পত্রিকা : তন্বী,দোলা ও স্বচ্ছন্দ।
সম্মাননা ও পুরস্কার : পেয়েছেন অনামী,সোপান,ভোরাই,অণুপত্রী,আলোর জোয়ার,আবৃত্তিলোক,জঙ্গল মহল অনন্য কবি সম্মান,আবৃত্তিলোক সম্মাননা সহ অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা।

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।