ফেলে আসা ঈদ ।। মানসী


জীবনের চাকা ঘুরছে,সময় বহমান।ধরণীর পথে চেয়ে কেটে গেছে কত বেলা।কখনো সুখে,কখনো ভরা বর্ষায় বা শ্রাবণঢলে কিংবা চৈত্রের খরায়।শৈশব স্মৃতি তাড়া করে বারংবার। পুরোনো দিন ভাসে আঁখি পাতে।মন-মস্তিষ্কে গেঁথে আছে হাজারো ঝিমধরা স্মৃতি।শৈশবের ঈদ ভাবলেই স্মৃতির নহর ঝরে।ফেলে এসেছি অনেকগুলি মধুময় ঈদ।

গ্রামে বেড়ে উঠা।তাই ছোটবেলায় ঈদ কেটেছে অন্যরকম। শাওয়াল মাসের বাঁকা চাঁদের আগমনের কয়েকদিন আগে থেকেই ঘর-দোর গোছানোর কাজে লেগে পড়তেন বাড়ির গৃহবধুরা।আর চাকরিজীবী মানুষগুলো শহর থেকে গ্রামের বাড়ি ফিরতেন।নতুন জামা কিনে আনতেন,ছোটদের সে কি আনন্দ!অন্যরকম এক আমেজ বিরাজ করতো।

ঈদে নতুন জামা লুকিয়ে রাখার ব্যাপারটা বেশ মজার ছিল।কেউ দেখে ফেললেই পুরোনো  হয়ে যাবে বলে লুকিয়ে রাখতাম। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় জামা দেখিয়ে ফেললে তাকে সবাই মিলে ক্ষ্যাপাতাম,তোরটা পুরোনো হয়ে গেছে!গ্রামের বাড়িতে চিরচেনা এক রীতি ছিল,এলোকেশী বানানো।বাহারি রকমের ,নানান রঙের।ছোটরাও যোগ দিতো এ কাজে,বেশ মজা হতো।এ আধুনিক যুগে এসব আর তেমন দেখা মেলে না।

ঊনত্রিশ তম রোজার ইফতার শেষ করেই দল বেঁধে খোলা মাঠে যেতাম নতুন চাঁদ উঠেছে কি না দেখার জন্য।সে কি হৈ হুল্লোড়-চিৎকার চেঁচামেচি!সে সময় সাদাকালো টিভিতে প্রচারিত হতো চির চেনা সেই কাজী নজরুলের ''ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ''। চাঁদ রাতে হাতে মেহেন্দী পড়ার হিড়িক পড়ে যেত। আহ্ কি সুন্দর ছিল দিনগুলি।

অতঃপর কাঙ্ক্ষিত সেই ঈদের দিন।সুবহে সাদিক বেলায় উঠে পড়তাম। ফজরের নামাজের পর পর ই মাইকে ঘোষণা দিতো,"ঈদ মোবারক-ঈদ মোবারক"। উচ্ছ্বসিত মনে বয়ে যেত আনন্দের ফল্গুধারা।সকাল সকাল গোসল করে নতুন পোশাক পরিধান।মায়ের হাতের সেমাই আর বাহারি রান্নার আয়োজন।ঈদের দিন নতুন কচকচে নোট পাওয়া,সে কি যে আনন্দ!নতুন নোট  খরচা করতাম না কেউ ই।তারপর,খাওয়া -দাওয়া শেষে দলবেঁধে পাড়ার সাথীদের সাথে ঈদ মেলায় যাওয়া।বেশ মজা হতো।আর নানু বাড়ি বেড়াতে যাওয়া ঈদ সংস্কৃতি বললেও খুব একটা ভুল হবে না।

শৈশবের ঈদ মানেই যেন স্নিগ্ধ,নির্মল আনন্দে অবগাহন।বড় হওয়ার পর সেই আনন্দে ভাটা পড়ে।তবুও ঈদ নিয়ে আসে খুশির বার্তা। মুসলমানদের মধ্যে এই আমেজ যুগ যুগ ধরে বহমান থাকুক।

"শাওয়ালের ঐ বাঁকা চাঁদে খুশির কাঁপন উঠে
আসমান তলে ভুবন মাঝে আনন্দ ফুল ফুটে" 

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।