ঈদের জামা চাইনা বাবা ।। আতিক এ রহিম

 

মিতু স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে মাকে ডাকে মা, বাবা বাড়ি আসবে কবে?

তোর বাবা তো ঈদের দিন সকালে আইব।আজ রোজার পনেরোটা।অহন দোকানে অনেক বেচা কেনা হয়।

 মিতু ঘরের ভেতর চলে যায়।মা বুঝতে পারে কেন সে বাবার খবর নিচ্ছে বারবার।

   মিতু চর্তুথ শ্রেণিতে পড়ে।বাবা কবে ঈদের নতুন জামা নিয়ে আসবে দিন গুনছে সে।স্কুল বন্ধ। তারপরও টিউটর স্যারের কাছে যেতে হয় পড়তে।দুই বান্ধবী মিতু আর কেয়া।দুজনে খুব ভালো বান্ধবী।কোন কিছু কিনলে দুজনে ভাগ করে খায়।সারা রাজ্যের আলাপ দুজনার মধ্যে।কেয়ার বাবা বিদেশ থাকে।ঈদের মার্কেট করেছে তারা।কেয়ার জন্য,মায়ের জন্য,দাদা,দাদি ,নানা ও নানির জন্য এবার ঈদের কেনাকাটা করেছে।মিতু কেয়ার মুখের তাকিয়ে শোনে ঈদের কেনাকাটর কথা। মিতুর বাবা ঢাকা শহরে বঙ্গবাজারে একটি দোকানে চাকরি করে। ১৫/২০দিন পর পর বাড়ি আসে।আসার সময় কলা,রুটি,আপেল,আঙ্গুর ফল নিয়ে আসে।মিতুদের কেয়াদের মত এত টাকা নেই সে বুঝতে পারে।কেয়াদের বাড়িতে পাকা ঘর।ঘরের ভেতরে কল,ঝরনা,গ্যাসের চুলা,এসি আছে তা সে নিজের চোখে দেখেছে।মিতু স্কুলে যাওয়ার মধ্যে কেয়ার বাড়ি আসা যাওয়া করে। এছাড়া কেয়া এবং তাঁর মা তাকে খুব ভালোবাসে।মিতুকে পছন্দ করার কারণ তাঁর ক্লাসে রোল এক।কেয়ার রোল দুই।শত চেষ্টা করেও মিতুকে পেছনে ফেলতে পারেনা।মিতুদের ছোট একটা টিনের ঘর।কোন রকম দুটি বিদ্যূতের বাতি এবং একটি পাখা চলে।তাতে কষ্ট করে সে পড়াশোন করে। আর্থিক দিক দিয়ে দুজনের বৈষম্য থাকলেও বন্ধুত্বের দিক দিয়ে কোন ঘাটতি নেই।ক্লাসে দুজনে বসে পাশাপাশি।

   গত ঈদের কথা মনে পড়ে মিতুর।বাবা তার জন্য সুন্দর গোলাপি রঙের একটি ফ্রক কিনে দিয়েছিল।মাঝে মাঝে স্কুল পড়ে যায়। কয়েকদিন আগে বাবা মোবাইল করেছিল। বাবাকে এবার বলেছে টুকটুকে লাল একটা জামা আনতে। বাবা বলেছে ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে জেগে তুমি জামা দেখতে পাবে।তুমি ভালো করে পড়াশোনা করবে।সে বাবাকে কথা দিয়েছে ভালো করে পড়ালেখা করব।বাবাকে সে দিন একটা পাপা দিয়ে মোবাইল রেখে দেয়। মা দেখে মিটমিটিয়ে হাসে।

    ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই।সকাল বিকাল গ্রামের সবাই বালিগাঁও বাজারে ছুটছে কেনাকাটার জন্য। সবার  মাঝে ঈদের আনন্দের ঢেঊ জাগছে।

সকালে সবাই একটা খারাপ সংবাদ নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে।খবরটা মিতুর মায়ের কাছেও চলে আসে। মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,এবার আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

মিতু বলে,কি হয়েছে মা?

তোর বাবা বঙ্গবাজারে চাকরি করত সে বঙ্গবাজার ভোর রাতে আগুন লাগছে। সব দোকান পুড়ে যাচ্ছে।

মিতু ভয়ে এবং চিন্তিত হয়ে বলে বাবা কই মা? 

মা বলে,তোর বাবা আছে সেখানে। 

ঘরের ছোট টিভি খুলে দেখতে আগুনের বিশাল লেলিহান শিখা। দাউ দাউ করে  জ¦লছে সব দোকান। বিভিন্ন চ্যানেলে  সরাসরি দেখাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের কান্না আর আহাজারি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।আকাশ হেলিকপটার  দিয়ে পানি দিচ্ছে আগুন নেভানোর জন্য। অসহায়ের মত তাকিয়ে দেখছে দোকান ভর্তি জিনিসপত্র  পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। কিছু করার ক্ষমতা নেই আগুনের কাছে।পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে বঙ্গবাজার।

মিতু বাবাকে মোবাইল করে।বাবা মোবাইল ধরেনা। কয়েকবার মোবাইল করার পর বাবা মোবাইল ধরে।বাবা কোন কথা বলতে পারেনা।তবুও নিজেকে সংযত করে বলে, মিতু।

মিতু কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,বাবা তুমি ভালো আছ তো?

ওপার থেকে ভারি একটা কণ্ঠ ভেসে আসে আমি ভালো আছি বাবা।

মিতু বলে,বাবা আমি টিভিতে সব দেখছি। তোমাকে তো দেখছিনা?

আমাকে দেখতে পাবেনা বাবা।

মিতু বলে,বাবা এবার আমি ঈদে কোন জামা চাইনা।তুমি বাড়ি ফিরে আস।

মিতুর বাবা আকবর ভেজা ভেজা কণ্ঠে বলে,বাবা তুমি কান্না করনা আমি তোমার জন্য জামা নিয়ে আসব।

মিতু বলে,না বাবা আমি জামা চাইনা।আমি জামা চাইনা।হু হু করে কেঁদে ওঠে।



    আতিক এ রহিম 

গ্রাম: কলমা, ডাকঘর:কলমা, উপজেলা:লৌহজং, জেলা:মুন্সীগঞ্জ।

গড়:০১৯৯৯৩২৪৯২৫

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।