ঈদ মানেই আনন্দ।ঈদ একটি ধর্মীয় উৎসব হলেও তার অনেক সামাজিকীকরণ হয়েছে। এখন অনেক ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা যেমন দুর্গাপূজায় প্রাণ খুলে অংশগ্রহণ করে, ঠিক তেমনি অনেক হিন্দুও মুসলমানদের ঈদের আনন্দ উৎসবে শামিল হয়।
একে অপরকে ভালোবেসে নিঃসংকোচে মেনে নিতে পারলে ধর্মীয় উন্মাদনার ভূত জেগে উঠতে পারে না।
মনে পড়ে, অনেকদিন আগে জাহাঙ্গীর নামে এক ছাত্র আমার কাছে টিউশন পড়তো। মনের দিক থেকে ও অনেকটা নরম স্বভাবের ; শাস্ত্র,সাহিত্য ও বিজ্ঞানমনস্কতা— সবটাই ছিল ওর মধ্যে…
ও একবার নিমন্ত্রণ করেছিল,ঈদের দিনে আমায়।
যথারীতি ঈদের দিন স্নান সেরে,মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনে,সাইকেলে চেপে ওর বাড়ির দিকে রওনা হলাম। মোটামুটি ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই ওদের নিত্যা গ্রামে পৌঁছে গেলাম। গ্রামে একজন লোকের কাছে জিজ্ঞেস করে দিকনির্দেশ নিয়ে পৌছে গেলাম ওর বাড়িতে। দেখি,জাহাঙ্গীর লুঙ্গি পড়ে গরুকে খাওয়ানোর জন্য খড় কাটছে। ওর মা একটা পুরনো কাপড়ে বারান্দায় বসে পান চিবোচ্ছে…
বুঝলাম একটা সত্যি কথা, তা হলো দুর্গাপূজো হলেই যেমন সবার নতুন পোশাক আর ভালো ভালো খাবারের সংস্থান হয় না, ঠিক তেমনি সবাই ঈদের দিনেও নতুন পোশাক ও পছন্দের খাবার জোগাড়ে অসমর্থ…। আমি জাহাঙ্গীরের মাকে মিষ্টিটা দিয়ে পা ছুঁয়ে প্রণাম করলাম। ওর মা বলল, "বেঁচে থাকো বাবা আর মিষ্টি আনার কি দরকার তোমারই তো অভাব!"
আমি বললাম, "কাকিমা ভালো আছেন?"
উনি বললেন, "হ্যাঁ বাবা,তবে হাঁটুর খুব ব্যথা…"
জাহাঙ্গীর খড় কাটতে কাটতেই বলে উঠলো, "মা দাদাকে সেমাই দাও। " ওর মা ঘর থেকে একটা থালায় সেমাই ও মিষ্টি নিয়ে এসে বলল, "নাও বাবা ওখানে জল আছে, হাত ধুয়ে খেয়ে নাও।" আমি থালাটা হাতে নিয়ে বললাম, "আপনারা খেয়েছেন?"
ওর মা নড়বড়ে সুরে বললেন, " হ্যাঁ বাবা, তুমি খেয়ে নাও। আমি বললাম," না কাকিমা এতগুলো সীমাই ও মিষ্টি আমি খেতে পারব না,একটু তুলে নিন। " জাহাঙ্গীর -ভাইয়ের মা থালা নিয়ে এলে, আমি অনেকটা সীমাই ও মিষ্টি তুলে দিয়ে,তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম কারণ আমার চারটে থেকে টিউশন। ফেরার সময় কাকিমা ও জাহাঙ্গীরকে 'আসি' বলে সাইকেলে চেপে আস্তে আস্তে প্যাডেল করে বাড়ি ফিরে এলাম…সাইকেল চালাতে চালাতে একটাই কথা মনে হচ্ছিলো, "দারিদ্রতা কত উৎসবে কত জনের আনন্দের পথে অন্তরায়! সেখানে ধর্ম, জাতি, ও বর্ণ কোনোটাই বড় নয়…।"
পিন্টু কর্মকার, কসবা, তপন, দক্ষিণ দিনাজপুর,733127, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।