অনন্ত আর আব্দুল্লাহ দুই ভাই। অনন্ত সবেমাত্র ক্লাস টুতে পড়ে আর আব্দুল্লাহ বাড়িতে মায়ের কাছে অ আ ক খ শিখতে শুরু করেছে। অনন্তর মাত্র ছয় বছর বয়স। চার বছর তিন বছর বয়সে মায়ের কাছ থেকে ভালো ইংরেজি শিখে। মাঝে মাঝে অনন্তের মা যখন সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকে তখন ছেলেকে পড়ানোর ততটা সুযোগ হয় না তাই মোবাইলে গুগল বাংলা অডিও ছড়া কবিতা ডাউনলোড করে দেয়, অনন্ত মায়ের ব্যস্ততা দেখে শুইয়ে শুইয়ে মোবাইলে অডিও শুনে আর মুখস্ত করে তারপর নিজে নিজে বলতে থাকে। একদিন অনন্তের মা প্রশ্ন করলো, আচ্ছা আব্বু আমি তো তোমাকে কবিতা পড়াই নাই কোথায় থেকে মুখস্ত করেছো? আম্মু তুমি যখন কাজে ব্যস্ত থাকো তখন আমি অডিও শুনে মুখস্ত করি। মাশাল্লাহ আব্বু আমি অনেক খুশি তুমি নিজের চেষ্টায় কবিতা মুখস্ত করেছো তোমার পড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে আম্মুর অনেক ভালো লাগে। তুমি একদিন অনেক বড় হবে আব্বু ভালো ছাত্র হবে ভালো রেজাল্ট করবে সবাই খুশি হবে। মায়ের এমন কথা শুনে অনন্ত বললো, আম্মু আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দাও আমি স্কুলে যাবো। মা বললো, না বাবা তুমি এখন অনেক ছোট পড়াশোনা অনেক চাপ, তাছাড়া তুমি আম্মু কে ছাড়া স্কুলে একা থাকতে পারবানা কান্না করবা, তুমি আরেকটু বড় হও তারপর ভর্তি করে দিবো। না আম্মু আমি পারবো কান্না করবোনা আমি তো সবই পড়তে পারি। ছেলের আগ্রহ দেখে মায়ের বুকটা গর্ভে ভরে যায়। ঠিক আছে বাবা আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলে তোমাকে ভর্তি করে দিবো ঠিক আছে। একদিন অনন্তের বাবার সাথে কথা হলো। আব্বু আমি স্কুলে যাবো তুমি আম্মু কে বলো আমাকে ভর্তি করে দিতে। না বাবা তুমি পারবানা
তুমি অনেক ছোট। আব্বু আমি পারবো তুমি দেখো। আচ্ছা অনন্ত তোমার আম্মুর কাছে মোবাইলটা দাও শুনি তোমার আম্মু কি বলে। ঠিক আছে বাবা আমি দিচ্ছি। আম্মু এই নাও বাবা তোমার সাথে কথা বলবে। হেলো, কেমন আছো? আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? আলহামদুলিল্লাহ, ছেলের পাকা কথা শুনছো স্কুলে ভর্তি হতে চায় তুমি কি বলো? ওরতো বয়স হয়নি ও কি পারবে? ওর আগ্রহ দেখে মনে হয় পারবে, তুমি জানো না অনন্ত অনেক ট্যালেন্ট নিজে নিজে অনেক গুলো কবিতা আর গল্প মুখস্ত করেছে একবার শুনলেই মুখস্ত করে ফেলে। আচ্ছা তুমি দেখো চিন্তা করে স্কুলে গিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে হবে পারবে তো? তুমি বললে আমি ভর্তি করে দিবো তাছাড়া আমি তো আছি ছেলের পিছনে একটু সময় দিবো তাছাড়া আমার সারাদিন কোনো কাজ নেই ছেলে মেয়েকে মানুষ করার দায়িত্ব আমার। ঠিক আছে তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো। আল্লাহ হাফেজ।
আম্মু বাবা বলেছে আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিতে? ঠিক আছে তুমি ভালো করে আম্মুর কাছে পড়ো সামনে জানুয়ারী এলে তোমাকে ভর্তি করে দিবো। ঠিক আছে আম্মু। মাঝে মাঝে অনন্তের বই নিয়ে আব্দুল্লাহ ছবি দেখে মাকে প্রশ্ন করে আম্মু এটা কি ওটা কি? আম্মু আমি আর আমার ভাইয়া একসাথে স্কুলে যাবো ঠিক আছে। কিছু দিন পর ভর্তির সময় এলো। অনন্ত কে ভর্তি করার জন্য স্কুলে নিয়ে গেলো। স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেখে বলে ওইতো ছোট মানুষ আরেকটু বড় হলে স্কুলে পাঠালে ভালো হতোনা। জ্বি স্যার আমরা চেয়েছিলাম আরো পরে ভর্তি করবো কিন্তু ওর আগ্রহ দেখে নিয়ে আসলাম। আচ্ছা আমি কিছু প্রশ্ন করি দেখি ওর মেধা কেমন, আচ্ছা অনন্ত তুমি অ আ, ক খ, এ বি সি ডি পারো? পারি। চমৎকার ভাবে অনন্ত সব প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হলো। স্যার খুশি হয়ে অনন্তের ভর্তি সম্পূর্ণ করলো। একজন ভদ্র নম্র ছেলের মতো অনন্ত রোজ সকালে স্কুলে যায় এভাবে একটি বছর কেটে যায় চলে এলো ক্লাস ওয়ানের বার্ষিক পরীক্ষা। স্কুল শেষে বাড়িতে এসে মায়ের কাছে ক্লাসের পড়া গুলো মুখস্ত করে তারপর স্কুলে গিয়ে লিখে এবং স্যারের কাছে বলে। ওয়ানে অনন্তের রোল নম্বর ৩৮ তারপর বার্ষিক পরীক্ষা উত্তির্ন হয়ে ক্লাস টুতে অনন্তর রোল নম্বর ৩ এ আসে। বাবা মা অনেক খুশি ছেলের এমন কৃতিত্ব দেখে, ক্লাসের সকল শিক্ষকগন ও খুব সন্তুষ্ট, তারা ভাবে ক্লাসের সবচেয়ে ছোট ছেলে অনন্ত দারুণ রেজাল্ট করেছে, অনন্তের লেখাপড়ার পাশাপাশি আগ্রহ বোধ আছে, এককথায় বলা যায় অনন্ত একজন মেধাবী ছাত্র। ক্লাসের সকল শিক্ষকরা অনন্ত কে খুব স্নেহ করে এবং ভালোবাসে। সত্যি এমন ছেলের পিতা মাতা গর্ভিত, বর্তমানে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী ছেলে মেয়ে কমই পাওয়া যায় কিন্তু অনন্ত অলস অমনোযোগী নয় লেখাপড়ার প্রতি তার আগ্রহ বোধ আছে এবং খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে অনন্ত।