স্মরণ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।। আঃ আজিজ ইবনে আঃ মালেক

 

১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বাঙালী জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায় ৷ একটি শোকের ছায়ার দিন ৷ দেশি-বিদেশীদের ষড়যন্ত্রে উচ্চাভিলাসী স্বার্থান্বেষী চক্রান্তকারী ও কতিপয় সেনা অফিসারদের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধু তার স্বপরিবার সহ হত্যা হয়েছিল ৷ এই নির্মম হত্যাকান্ডের আজ গভীরভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং সমব্যথী হচ্ছি ৷ শ্রদ্ধায় অশ্রু নিবেদন করছি ৷ দোয়ায় বিভোর আল্লাহ যেন তাদের ক্ষমা করে দেয় ৷

আজ আমরা অত্যন্ত দুঃখ ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দিন পার করছি ৷ রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে,তোমরা মৃত ব্যক্তির ভালো গুণগুলো আলোচনা কর ৷ তাই উনার কিছু গুণ তুলে ধরছি উনার সম্পর্কে ৷ 

যেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্থপতি ও সর্বাধিনায়ক ৷ যেই বঙ্গবন্ধুর 7ই মার্চের অগ্নিঝরা ও আস্থাশীল বক্তব্যে সাড়া দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ  নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দীর্ঘ 9 মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল ৷ স্বাধীনতার স্বাধ ভোগ করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ৷ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস যে,তাকেই স্বদেশীরাই হত্যা করেছে ৷ আহ্ দুঃখ কোথায় রাখি ! আমরা জানি বঙ্গবন্ধু একজন খাটি মুসলমান যার জলন্ত প্রমাণ হচ্ছে যে,তিনি সর্বপ্রথম ইনশাআল্লাহ বলেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন ৷ তিনি ইসলাম প্রিয় ছিলেন তিনি শান্তিপ্রিয় ছিলেন ৷ তিনি দূর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ৷ তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার প্রতি মনোনিবেশ করেছিলেন ৷ ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে নয় বরং রাসূল (সাঃ) এর আদর্শ ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ৷ আলেমদের সাথে সাহচর্য লাভে তিনি ধন্য হতেন ৷ আলেমদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি ছিল স্বভাবসুলভ ৷ তার পিতাও ছিল আলেমপ্রেমী ৷ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে, তিনি শামছুল হক ফরিদপুরী রঃ এর খলিফা ছিলেন ৷
বঙ্গবন্ধু সবসময় উনার সাক্ষাতে ধন্য হতো ৷ বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন ৷

তিনি  ১৯৭২  সালে ১০ই জানুয়ারী মুক্ত হয়ে বলেছেন যে,আমি বাঙালী আমি মুসলমান, মুসলমান দু"বার মরেনা ,একবারই মরে৷ ইতিহাস  অধ্যয়ণে পাওয়া গেছে যে, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে বাগদাদ সফরকালে আঃ কাদের জিলনী (রঃ) এর কবর জিয়ারত করেছেন ৷ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে বাবার মত শ্রদ্ধা করতেন ৷ 

তিনি তাবলীগ জামাতকে অরাজনৈতিক বিবেচনা করে টঙ্গীতে বিশাল প্রাঙ্গন বরাদ্দ দেন ৷ এবং কাকরাইল মসজিদের জন্য অতিরিক্ত জায়াগা বরাদ্দ দনে ৷ এমনকি ইসলামিক ফাউন্ডেসন সংগঠন করে অসহায়দেরকে সাহায্য করেছেন ৷ ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত এবং মাদকমুক্ত দেশ গড়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন ৷ আজ আমরা তার সেই সোনালী স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে আসাটাই বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হবে ৷ তাঁর আদর্শ যদি রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক লালন করি এবং তা বাস্তবায়ন করি তাহলেই তার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হবে ৷ কিন্তু দুঃখ আমাদের অনেকেই উনাকে ভালোবাসি বলে শ্লোগান দিই কিন্তু তিনি যেমন ইসলামের জন্য, দেশের জন্য,জনগণের জন্য ,অন্যায়,অবিচার ও দূর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এবং বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, সেই রকম আদর্শ বর্তমানে আমাদের মাঝে নেই বললেই চলে ৷

মোট কথা হচ্ছে,ইতিহাস পর্যালোচনা করলে জানা যায় যে,বঙ্গবন্ধু ইসলাম ও আলেমপ্রেমি ছিল ৷ তিনি শৈশব থেকেই জনদরদী ছিলেন ৷ অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন ৷ যেমন তিনি ছোট বেলায় বৃষ্টির সময় একটি ছাতা নিয়ে স্কুলে গিয়েছেন কিন্তু আসার সময় ছাতা ছাড়া বাড়িতে আসায় তার মা জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেছেন যে,আমার পাশের একজন প্রতিদিন বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে স্কুলে আসে সেজন্য তাকে আমার ছাতা দিয়ে দিলাম ৷ কাজেই বঙ্গবন্ধৱ শৈশব থেকেই মানুষের পাশে দাড়াতেন ,মানুষদেরকে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করেছেন ৷ আজ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু বার্ষিকীতে আমরা তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করি ৷ আল্লাহ যেন তাকে সহ পরিবারকেও জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করেন ৷ আমীন ৷

নাম_মাওলানা আঃ আজিজ ইবনে আঃ মালেক 
শিক্ষক- মিফতাহুল উলুম কাওমী মাদ্রাসা (লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ)

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।