কিছু স্মৃতি আছে যা ভুলতে পারা যায় না ।
সে সব স্মৃতি মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে যায় মনের কোণায় এতে যেমন মৃদু হাসিতে চোখ উজ্জ্বল হয় তেমনই চোখে বয়ে যায় অশ্রুর নদী।
অনেক উদ্বেগ আর অপেক্ষার পর সেদিন প্রথম দেখা হলো দুজনের। কফি শপের দোতলার বারান্দা থেকে শ্রমনা দেখছিল ঈশান সি এন জি থেকে নেমেই দৌড়ে সিঁড়ি ভেঙে উপরে ওঠে আসছে হন্তদন্ত হয়ে।
প্রথম দেখা! কিন্তু চিনতে ভুল হয়নি তাকে।
এই দৃশ্যটা মনে হলেই চোখের কোণ ভরে ওঠে এক ফোঁটা জলে আর ঠোঁটের কোণে ঝিলিক দিয়ে যায় এক ফালি হাসি বাঁকা চাঁদের মতো।
শ্রমনা টেনশনে ভেতর বাহির করছিল। কখন ঈশানের দেখা পাবে কখন আসবে। এতো দেরি করার কথা তো ছিল না। ঠিক এগারটায় দেখা হবে এমনই কথা ছিল। শ্রমনা ঠিক সময়েই এসে পৌঁছেছে ভাগ্যক্রমে জ্যামে পড়তে হয়নি। ঈশানও হয়তো তাড়াহুড়ো করেছিল কিন্তু ওর গাড়িটা আসতে এতো দেরি করছিল যে আসতে পারছিল না। মাথাই আসেনি গাড়ি এখন নেই তো কী হয়েছে সি এন জি দিয়েই যাওয়া যায় যখন মনে পড়লো তখনই রওনা হয়ে গেল উদ্ভ্রান্তের মতো।
শ্রমনা অপেক্ষা করে আছে এটা ওর কাছে ভীষণ কষ্টের মনে হচ্ছে। ঈশশ মেয়েটা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তাই নিজের মাঝে একটা অপরাধও কাজ করছে।
শ্রমনা বারবার বারান্দায় দেখছে আর পায়চারি করছে। আজ দেখা করতেই হবে নয়তো আর সময় পাবে কিনা সন্দেহ। এতোদিন কেটে গেল দেখা হয়নি।শ্রমনা বিজি নয়তো ঈশান।
শ্রমনা ভেবেছে আসলেই ঈশান দেখা করতে চায়নি হয়তো ওর মধ্যে এক দোনোমনতা কাজ করছে। শ্রমনা হয়তো ওকে পছন্দ করবে না।
-আমাকে দেখে তোমার যদি পছন্দ না হয়?
যদি তুমি আমার সাথে আর সম্পর্ক না রাখ?
এরচেয়ে দেখা না করাই ভালো। আমি তোমাকে হারাতে চাই না।
-এটা তো হতেই পারে না! এমন কথা মনে হলো কেন? উল্টোটাও হতে পারে! আমাকে তোমার পছন্দ হলো না।
আমি তোমাকে পছন্দ করেছি এটাই আমার কাছে মেইন। তুমি কালো কী ফর্সা, লম্বা না বেঁটে আমার কিছুই যায় আসে না। তুমি আমাকে পছন্দ করেছো আমাকে ভালোবাসো এটাই সত্যি আমার কাছে। মনে রেখো সবার সাথে প্রাণের সম্পর্ক হয় না। আল্লাহই সম্পর্ক তৈরি করেন আর ভালোবাসা স্বর্গ থেকেই আসে।
সবাইকে তোমার ভালো লাগবে বা ভালোবাসা হয়ে যাবে এটা কখনোই হয় না। তাই এমন কথা আর কখনওই বলবে না।
ওদের অসংখ্য বার ফোনে কথা হয়েছে কিন্তু কখনো ভিডিও কল হয়নি। আসলে দুজনেই চায়নি ভিডিও কলে দেখা হোক সামনাসামনি দেখা হবে এটাই উদ্দেশ্য ছিল।
কাঁচের দরজাটা সরিয়ে ঈশানের চোখ যখন চারিদিক খুঁজছে শ্রমনা তখন বারান্দা থেকে একদম সামনে দাঁড়িয়ে। মুখে উজ্জ্বল হাসি নিজেই গিয়ে হাগ করে ফেললো। আসলে প্রিয়জনকে আলতো হাগ করা ওর সোসাইটিতে নরমাল ব্যাপার তাই আপনা আপনি চলে এসেছে কিন্তু এটা আবার অনেকেই সহজভাবে নিতে পারে না।
শ্রমনা ঈশানকে অসম্ভব ভালোবাসে। ভালোবাসা কী শ্রমনা উপলব্ধি করতে পেরেছে ঈশানকে ভালোবেসে। প্রথম প্রেমের শিহরণটাই আলাদা রকমের। মন জুড়ে কেবল
ভালোবাসা আর ভালোবাসে বলেই ওকে হাগ করতে বাঁধেনি।
কফি হাউসটাতে সেদিন খুব একটা হট্টোগোল ছিল না। পাশাপাশি বসেছিল দুজন।
কফি হাউজের লোকগুলোও দারুণ রোমান্টিক। ওরা দুটো মগেই লাভ এঁকে কফি দিয়েছে। শ্রমনা বেশ মজা পেল।
ঈশান আড়চোখে ওকে দেখছিল। তেমন কথা বলছে না। শ্রমনার মধ্যে কোনো দ্বিধা কাজ করছিল না। মনে হচ্ছিল কতোদিনের চেনা!
এটা সেটা বলেই যাচ্ছে। একজনের সাথে যে প্রথম দেখা হয়েছে ওর মধ্যে কোনো জড়তা নেই অথচ ঈশান কেমন লাজুক লাজুক, চুপচাপ।
ঈশানের আচরণে শ্রমনা তো হেসেই শেষ।
সময় যে কখন চলে গেল বুঝাই গেল না একসময় ওদের উঠতে হবে ফিরতে হবে বাড়ি।
কিন্তু ছেড়ে যাওয়া যে এতো কষ্টের সেদিন ওরা বুঝেছে।
ঈশান আস্তে করে বললো, একটা সেলফি!
-ওহ অবশ্যই, আজ আমাদের প্রথম দেখা সময়কে ধরে রাখতে হবে না! পাশাপাশি বসে সেলফি নিলো। শ্রমনা ঈশানের হাত কখন ধরেছে জানেই না।
পর পর চারটা ছবি।
আর এই ছবিগুলো শ্রমনার জীবনের শ্রেষ্ঠ ছবি। ও যতো ছবিই তুলুক না কেন এর চেয়ে ভালো কোনো ছবিই হয় না।
স্মৃতি হয়ে রইলো সেই দিনটি, সেই সময়,
সেই ছবিগুলো।
এই স্মৃতি ভুলে যাবার নয়। সময় চলে যায় রেখে দিয়ে স্মৃতি!
আজও ওরা একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসে কিন্তু দূর থেকে ফোনে কথা হয় আর সেই ছবিগুলোই
ওদের দুজনের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় সবচেয়ে মধুময় স্মৃতি ধরে রেখেছে এক ফ্রেমে।
২০শে ডিসেম্বর ২০২৩
নিঘাত কারিম
জন্ম: ১৫ই জুলাই । উত্তরা ঢাকা। বর্তমানে বাস করছেন হিউস্টন, টেক্সাস, আমেরিকা। বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। Student of Software engineering , State University Texas.
ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্য চর্চা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে বিশেষভাবে জড়িত। প্রথম ছড়া প্রকাশিত হয় 'ফুলকুঁড়ি' পত্রিকায়, আট বছর বয়সে। তারপর 'বেগম', 'যায় যায় দিন'। 'গোধূলির ছোঁয়া' তার প্রথম বই। 'প্রতিবিম্বের কাছাকাছি' দ্বিতীয় বই। ‘একাদশে বৃহস্পতি’ একটি প্রিয় সংকলন বন্ধুদের নিয়ে। এছাড়াও 'ঝরাপাতার গুঞ্জন' যৌথ সংকোলন, 'বঙ-সাহিত্যপত্র' , 'প্রাণের বাংলা', 'শিশুতোষ ছড়া' এবং আরো অনেক গ্রন্থ, সংকলন ও পত্রিকায় তার কবিতা গল্প ছাপা হয়েছে। প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে গ্রল্পগ্রন্থ 'শেষ কদম ফুল' ।