চন্দ্রা, আজ পহেলা বৈশাখ
নতুন সালের সূচনা যে নয় কেবল,
তা অনেকের জীবনের নবসূচনা।
আমাদের সূচনাটা অবশ্য অনেক আগেই হয়েছে,
এরপর কেটে গেছে গোটা চারেক বৈশাখ
কিন্তু কি দূর্ভাগ্য দেখো -
তোমার লালপেড়ে সাদা শাড়ির জ্যোৎস্নাশোভিত দেহাবয়ব আর
দিব্যজ্যোতির হাসিময় বৈশাখ,
আমার জীবনে আর কোনদিন এলো না!
কাকিমা একদিন বললেন -
তোমরা ভালো বন্ধু হিসেবে থেকো,
ঠিক ভাই-বোনের মতো।
অমনি তুমি আমায় একজন বন্ধু
একজন ভাই এর মতো এঁকে নিলে,
যার সাথে হাসা যায়, কাঁদাও যায়
মারামারি করা যায়, দুষ্টামি করা যায়,
অভিমান করা যায়, ভালোবাসা যায়
কিন্তু ভালোবেসে দু'হাত চিরতরে ধরা
যায় না!
পাড়ার তেঁতুল গাছের তেঁতুলগুলোর কথা
আজও কি তোমার মনে পড়ে?
তেঁতুল খেতে চাইলে ভরসা কেবল আমি।
মনের সমস্ত কথা উজার করে বলে দেবার
লোকটাও - আমি।
এক পহেলা বৈশাখে তুমি লালপেড়ে
সাদা শাড়ি, কপালে সূর্যের মতো তেজস্বী
লাল টিপ, খোঁপায় ফুলের বেণী পড়লে,
বিশ্বাস করো, তোমায় অত সুন্দর আর কখনো দেখায়নি!
মনে হচ্ছিল, স্বর্গের না দেখা
কোন অপ্সরা বাংলায় এসেছে নেমে।
আমি ত তোমার ভাই, বন্ধুর চেয়ে
আরও অনেক ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছিলাম।
কখনো সেটা নিরালায় হয়নি বলা ঠিকই
কিন্তু তোমার মনোবৃত্তিতে আমার
চোখের চাহনি কখনো হানা দিতে পারেনি?
১৪২৪ এর সেই বৈশাখে প্রথম তুমি
আমার সাথে বন্ধন ছিন্ন করলে-সম্মানে।
তুমি পরে বললে, ওটা নাকি আমার জন্য
এক মস্ত বড় চমক ছিলো -
আমার অগোচরে তোমার তাকে আবিস্কার।
সত্যি ই খুব বড় চমক ছিলো!
মনের বারোটি মাসে যাকে প্রতিনিয়ত
দেখেছি, ভেবেছি, রাঙিয়েছি, ভালোবেসেছি
তাঁর হাতটি ধরে মেঠো পথে উড়াল শাড়ির
পতপত শব্দে নিঃশব্দের খোলা হাসির সৌন্দর্য
অবলোকন করার সৌভাগ্য আমার নয় জেনে।
আজও আবার পহেলা বৈশাখ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
চাট্টি বছর কেটে গেল, আরো যাবে বহুবছর
পৃথিবীর রঙ বদলাবে, বৈশাখও বদলাবে কিন্তু
চার বছর আগের সেদিন, সে বৈশাখ বুঝি
কখনো বদলাবে না,
চব্বিশের সেই বৈশাখ, সেই তুমি, তোমার শাড়ি
তোমার চুড়ি, তোমার ফুলের বেণী,
তোমার বন্ধন মুক্তি, সব, সবটা।
আজও বোশেখের আগমন আমাকে
চার বছর আগের বোশেখে নিয়ে যায়,
আমাকে না জানিয়ে মৃদু হেসে
তোমার তাঁর কাছে যাবার ঠিক আগের মুহূর্তে
যখন বৈশাখের মানেটা অন্যরকম ছিলো।
আমার বৈশাখ তাই আর্তনাদ করে ফেরে
যদি আবার সে বৈশাখ ফিরে পেতাম!