হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের গল্প অবলম্বনে
প্রচন্ড ঠান্ডা চারিদিকে বেশ জাকিয়ে বসেছে।আজ চান রাত।কাল হবে ঈদ।সব খানেই বেশ খুশির আমেজ।বিভিন্ন জায়গায় পটকা ফুটছে।জোরে জোরে ক্যাসেট প্লেয়ারে বাজছে গান।তিলোত্তমা রাজধানির রাস্তা গুলো ফাকা।
এর মধ্যেই বেরিয়েছে ছোট্ট একটা ছেলে মন্টু।ওর বাবা রিকশা চালাতো।একদিন হঠাত এক্সিডেন্ট করে মারা গেল।মা কাজ করত মানুষের বাড়িতে।একদিন রাতে মার সাথে শুয়েছে।সকালে দেখে মা নেই।প্রথমে ভাবল কাজে চলে গেছে।কিন্তু মা তো ওকে না খাইয়ে যায়না।
হয়ত তারা আজ জলদি ই যেতে বলেছে।ঘরে হাড়িতে ঢাকা দেয়া পান্তা খেয়েনিল বাসি তরকারি দিয়ে।সারা দিন টো টো করে ঘুরল।সন্ধ্যায় এসে দেখে মা আসেনি।রাতেও আসেনি।তারপর দিন ও না।লোকজন যেন মা কে নিয়ে কি বলছে।
পরদিন এলো সুলু বুড়ি যাকে মন্টু নানি বলত।সুলু বুড়ি সারাদিন ভিক্ষা করত।মাঝে মধ্যে মন্টু কে বিস্কুট কলা এটা সেটা দিত।
বুড়ি বলল তোর মায় আর আইব না।হ্যার লেইগা আর চিন্তা করিস না বাজান।
আইজ থিকা আমিই তোর লগে থাকুম।আমরা দুজনে মিল্লা ভিক্ষা করুম।তুই আমারে বসায়া ঠেলাগাড়ি ঠেলবি।
এভাবেই চলছিল।মাস ছয়েক হল এই সুলু বুড়ি ও মরে গেছে।বুড়ির চটের ভেতরে বেশ কিছু খুচড়া টাকা ছিল।পাশের ঘরের মস্তু চাচায় বলল বুড়ির বয়স হইছে কাম কাইজ করতে পারত না।তাই ভিক্ষা করত।বুড়ির টাকা গুলি আন। দেখি গুইন্না কত।দেখা গেল ৪৫৩ টাকা।মস্তু চাচায় বলে
""হোন তরে এই ট্যাকা দিয়ে একটা টুকরি আর বাদাম কিন্না দেই।এগুলা সারাদিন হাইট্টা বেচবি।মাল কিন্না যা থাকব সব টাই তোর লাভ।বুঝলি।
এরপর থেকে মন্টু ভিক্ষা না করে বাদাম বেচে।মুটামুটি খারাপ হচ্ছিল না।রমজান মাসে তার বেচা কেনায় ভাটা পড়ল।লোকে রোজা রেখে তো আর বাদাম খাবেনা।ভেবেছিল ইদের আগের দিন হয়ত লোকে বাদাম কিনতে পারে এই আশায় সে বেরিয়েছিল।কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি।মোটে ৬ টাকার বাদাম বিক্রি হয়েছে।
ইদের আগের রাতে অনেকেই ঘুরতে বেরিয়েছে কিন্তু বাদাম খেতে আগ্রহ নেই কারোই।
অই ছেড়া দেহি দে দুই ট্যাহার দে।
এর মধ্যেই লোক্ টা দু তিন টা বাদাম নিয়ে খেতে শুরু করে দিল।
আমি তো দিতাছি মাইপ্পা।আপনে আবার এখান থিক্কা নেন কেন।বিরক্ত মন্টু
আরে বেডা না খায়া দেখলে বুঝমু কেমনে তোর বাদাম মচমচা না পুতায়া গেছেগা।লোক টিকে বাদাম দিল।এরপরেও লোক টা আরো দু তিন টা বাদাম নিয়ে দু টাকার কয়েন ছুড়ে দিল
বেডা খবিস।মনে মনে গাল দিল।কত্তো গুলা বাদাম ফাও খায়া গেলো।
একে প্রচুর ঠান্ডা তার উপরে এত ক্ষন কিছুই পেটে পড়েনি।মেন রাস্তা ছেড়ে গলির ভেতরে ঢুকল।
একটা বাড়ির সামনে এসে বসল।কাল ইদের জন্যে রান্না হচ্ছে সুস্বাদু খাবার।সুন্দর ঘ্রান ছড়াচ্ছে।ভাবল একটু খাবার চাইবে কিনা।পরক্ষনেই ভাবল নাহ থাক।এসব বড় লোকের বাড়িতে দারোয়ান থাকে।যদি গলা ধাক্কা দেয়।আবার বিদেশি কুকুর ও থাকে।যদি লেলিয়ে দেয়।তাহলে তো কামড়ে ছিড়ে ফেলবে।
এদিকে রাত যত বাড়ছে ঠান্ডা ও তত বাড়ছে।হঠাত করেই বড় বড় ফোটায় শুরু হল বৃস্টি।বৃস্টি থেকে বাচতে একবাড়ির গাড়ি বারান্দার ছাদের তলায় আশ্রয় নিল।
বাপরে বাপ কি ঠান্ডা।পাতলা সোয়েটারে কি এই শীত মানে।শীত থেকে বাচতে তার সাথে জ্বলতে থাকে কুপি টা র আগুনের উপরে হাত রাখল।এদিকে অত হাওয়া বইছেনা তাই কুপি টা যে এতক্ষন ধরে জ্বলছে তাতেই কিছু টা হলেও রক্ষা
এভাবে আগুন পোহাচ্ছে।হঠাত দেখল অই বাড়ির দরজা খুলে গেছে।যে ভদ্রলোক তার দিকে এসে হাসতে হাসতে কোলে তুলে নিল মন্টু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল আরে এ তো ওর বাবা।
মন্টু কেন কোলে নিয়ে ওর বাবা গেল বাড়ির ভেতর। কি বিশাল বাড়ি।ভেতর টা কি আরাম দায়ক গরম।পোলাও রোস্ট রেজালার গন্ধে মৌ মৌ করছে।বাড়ির ভেতরে দেখে মা দাঁড়িয়ে আছে।দুজনেই হাসছে।কী সুন্দর হাসি।দুজনেই অনেক সুন্দর আর দামি পোশাক পরনে।মন্টু দুজন কেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।আরে সুলু বুড়ি ও দেখি আছে।তার পরনেও দামি পোশাক।কি সুন্দর পরিপাটি।
মন্টু অভিমান করে বলে
আমারে থুইয়া কই গেছিলা সবাই??
নারে বা্জান আর তোরে থুইয়া কোন খানে যামুনা।আমরা সবাই এই খানেই তো থাকুম।আর কোন কস্ট নাই।
মন্টুর বসে থাকা নিথর দেহ টি সর্ব প্রথম দেখে সেই বাড়ির দারোয়ান।বাদাম টুকরি নিয়ে বসে থাকা একটা ছেলে কুপির উপরে হাত রেখেছিল মনে হয় ঠান্ডা থেকে বাচতে সে কুপির আগুনের উপর হাতে রেখেছিল তার হাসিটা যেন অপার্থিব স্বর্গীয় কাল রাতের তীব্র ঠান্ডায় মারা গেছে।