ধারাবাহিক উপন্যাস: দিদার চৌধুরী'র "হৃদয়ের কান্না" -৬।। বর্ণপ্রপাত


কি যে বলেন, ওখানেই তো সব সার্থকতা শিউলীর। পবিত্র সেই শিউলী ঝরে পড়ে পবিত্র হয়ে। অলি ফুল না দেখার আগেই। এর থেকে বেশী সার্থকতা আর কি হতে পারে?
এমন সময় শিউলীর বাবা এসে বলল,
: বাপুরা, এখানে রাতে থাকতে তেমন কষ্ট হয়নি তো? কি আর করবো বলো, শিউলীর মা যদি আজ বেঁচে থাকতো, তবে তো তোমাদের অযত্ন হতো না। মা মরা মেয়ে কতই আর বয়স। কিবা তোমাদের যত্ন করবে।
বুঝতে পারলাম শিউলীর মা বেঁচে নেই। তাইতো বলি এই বাড়িতে লোকজন এত কম কেন।
শিউলীর বাবাকে বললাম,
: না না কাল থেকেই শিউলী আমাদের সেবা-যত্ন করেই চলছে। সেবা যত্নের কোনো কমতি হয়নি। বরং বেশিই হয়েছে।
শিউলীর বাবা কি যেন বলতে চেয়ে আবার ভিতরে চলে গেলেন।
শিউলী এসে বললো ,
আজ দুপুরের ভোজ শেষ করে ,তবেই যাবেন।
 আমি হেসে বললাম,
: তা কি করে হয় ।এই অপ্রত্যাশিত বিপদের মাশুল তো অনেক হলো ,আর কেন?
আকস্মিক যন্ত্রণা জনিত স্নায়বিক বিক্ষোভের প্রকাশ পেলাম তার ভাষায়। অপ্রত্যাশিত বিপদ বলেই তো এই অন্দরমহলে প্রবেশ এর ভাগ্য হলো। নয় তো...!
: নয় তো কি?
কিছুক্ষণের জন্য কেউ কোনো কথা বলল না। নিরব নিস্তব্ধতায় ভরে উঠে । মায়াবী ইন্দ্রজাল সৃষ্টি করে এক মোহনীয় ভালোবাসার বিন্যাস ।
 শিউলি কিছুক্ষণের এই মৌনতা ভেঙ্গে বলে উঠলো।
আপনার সাথে আমার কথা বলতে খুব ভালো লাগছে। মনে হয় আপনি আমার অনেক দিনের চেনা মানুষ।
: এমন কেন হয় বলতে পারেন?
দেখলাম শিউলীর চোখের কোনায় জল বিন্দু স্থির হয়ে আছে, মনে হয় জমাট বাঁধা বেদনার বিস্তীর্ণ জলরাশি ।
: আপনার চোখে দেখি জল?
: কই নাতো?
: ওই যে জমে আছে।
: যে জল চোখে সাথে সম্পর্ক শূন্য তা তো গড়াতেই অভ্যস্ত। একে তো ধরে রাখা যাবে না।
: আপনি তো বেশ সাহিত্যের ভাষায় কথা বলেন।
: আপনি কি পেশাদারী তোষামোদকারী ?যে তোষামোদ করছেন।
: আপনি যদি মনে করেন । তবে তাতে আপত্তি নেই।
শিউলি কথাকে অন্যদিকে মোড় ঘুরানোর জন্য বলল ,
: বাড়িতে আপনার কে কে আছেন?
: বাড়ির কথা বলছেন? আমার মা, বিধবা বোন, আর আমার বেদুরা।
শিউলী বেদুরার অর্থ বুঝতে না পেরে পুনরায় জিজ্ঞেস করল।
: বেদুরা কে হয়?
আমি হেসে বললাম, বেদুরা আমার পোষা কুকুর।
শিউলী বড় একটি নিশ্বাস ফেলে বলল,
: ও কুকুর বুঝি!
শিউলির বাবা এদিকে আসতে দেখে, শিউলী উঠে চলে গেল।
শিউলী বাবা এসে বলল,
: বাপুরা, শিউলি মা বলছিলুম, যে দুপুরে খানা এখানে খেয়ে যেতে । তা যেন তোমাদের আপত্তি না হয় , এই আমি বলে রাখলুম। ওই সামান্য ডাল ভাত এই আর কি। তা তোমরা খোশগল্প করো । এ কথা বলে উনি চলে গেলেন।
আমি উৎপল বসে আছি‌।
হেসে উৎপল কে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে?
: দুপুরে খেয়ে যেতে তোর কি আপত্তি আছে?
একটু পর শিউলির বাবা পুনরায় আসলেন, ধুতির কোনা হতে কাঁপা কাঁপা হাতে কি যেন বাহির করছেন।
একশত টাকার দুখানা নোট আমার হাতে দিয়ে বললেন,
: তোমাদের কে দিলুম। কাউকে বলো না যেন। ভাগ্যিস কাল যদি তোমাদের না পেতাম। তবে না জানি কপালে কি কর্মই না গড়তুম। একে মায়না মনে করোনা সোনা ধনেরা।
লোভ আর বৃদ্ধের সরল অনুরোধে টাকাগুলি না নিয়ে পারলাম না। হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নিয়ে নিলাম। বৃদ্ধ ভদ্রলোক চলে গেলেই উৎপল কে বললাম,
: ধর টাকাগুলো পকেটে রাখ। এটাকে মাইনে মনে করিস না।
তারপর দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাড়ির পথে রওনা হব‌। ঠিক সেই সময়ে শিউলী এসে হাজির। পরানে একখানা হালকা নীল রঙের শাড়ি। বেশ তো সুন্দর লাগছে । মাথায় একটি কৃত্রিম গোলাপ বেশ শোভা পাচ্ছে । বেশ পরিপাটির মাঝেও মুখখানি যে মলিন , তা বেশ বুঝা যাচ্ছে।
শিউলীকে বললাম,
: অনেক তো হলো, এখন যে যেতে হয় ‌।
(চলবে)

Post a Comment

মন্তব্য বিষয়ক দায়ভার মন্তব্যকারীর। সম্পাদক কোন দায় বহন করবে না।

Previous Post Next Post

আপনিও লেখুন বর্ণপ্রপাতে

ছড়া-কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ( শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, লোকসাহিত্য, সংগীত, চলচ্চিত্র, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সমাজ, বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনা ও প্রবন্ধ), উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী, গ্রন্থ ও সাহিত্য পত্রিকার আলোচনা ও সমালোচনা, চিঠি, সাহিত্যের খবর, ফটোগ্রাফি, চিত্রকলা, ভিডিও ইত্যাদি পাঠাতে পারবেন। ইমেইল bornopropat@gmail.com বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।