কাল রাত থেকেই অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। কেয়ার একেই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছে তার ওপর ঘুম ভেঙে বৃষ্টি দেখে মন-মেজাজ খারাপ। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তুষারকে বললো – এই শোনো, আজ রবিবার তো কি হয়েছে, এই বৃষ্টির দিনে জম্পেশ করে খিচুড়ি করবো, সাথে ইলিশ-ভাজা। তুমি বাজারে গিয়ে দেখোনা ভালো ইলিশ পাও কিনা।
– "এই প্যাচপেচে কাদার মধ্যে বাজারে যাবো ? ওখানকার অবস্থাতো আরও খারাপ। আজ নাহয় ডিমের ওমলেট আর পাপড় ভাজা দিয়েই খিচুড়ি খাবো, ওতেও দারুন জমবে।"
– "আমি একটা কিছু বললেই ঠিক তার উল্টো বলা তোমার স্বভাব। কোনোদিন কোনো কিছুতেই আমাদের মতের মিল হলোনা, এভাবেই এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম।"
– "ঠিক আছে, যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি।" তুষার হাতে ছাতাটা নিয়ে বেরোলো।
কেয়া গোবিন্দভোগ চাল আর মুগডালটা বেছে রাখলো। এখন রান্না করবেনা, খাওয়ার একঘন্টা আগে চাপাবে।
তুষার বাজার থেকে ফিরে রান্নাঘরের সিঙ্কে মাছের ব্যাগটা রেখে এলো। কেয়া রান্নাঘরে গিয়ে ব্যাগ খুলে দ্যাখে মাংস। সঙ্গে সঙ্গে চেঁচাতে শুরু করলো – "তোমাকে আজ মাংস আনতে বারণ করেছিলাম।"
– "আজ রবিবার, তাই মাংসই আনলাম, রবিবারে মাছটা তেমন জমেনা।" কথা কাটাকাটি শেষ পর্যন্ত চরম পর্যায়ে পৌঁছলো। তুষার রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল ছাতা ছাড়াই।
কেয়া – "কোথায় যাচ্ছ, এদিকে শোনো।"
তুষার ফিরতেই ওর হাতে ছাতাটা দিয়ে বললো – "বৃষ্টিতে ভিজলেতো আবার আমাকেই ভুগতে হবে; নাও ছাতাটা ধরো, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো। আজ মাংসের পোলাও বানাবো।"
তুষার হাসতে হাসতে বললো – "আগে বললেই হতো, তাহলে আর ঝগড়া হতোনা। নাঃ, এই বৃষ্টিতে আজ আর বাইরে যাবোনা, তোমার কাজে তোমাকে সাহায্য করি।"
– "হ্যাঁ, আমিতো শুধু তোমার সাথে ঝগড়াই করি" এই বলে হেসে উঠলো।
তুষার ও সেই হাসিতে যোগ দিলো।
----
লেখিকা পরিচিতি:--
অর্পিতা ঘোষ পালিতের জন্ম নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর শহরে। বর্তমানে বাড়ি কলকাতায়। ছোট থেকেই সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, দৈনিক কাগজ, শিশু-সাহিত্য পত্রিকা, বাংলাদেশের দৈনিক কাগজ, নিউ জার্সি, আমেরিকা, প্যারিস, কানাডার প্রভৃতি পত্রিকায় ও আসাম ও ত্রিপুরার দৈনিক কাগজে অসংখ্য লেখা প্রকাশিত।
একক কাব্যগ্রন্থ " পাথর পাতা নদী", গল্পগ্রন্থ " জীবন কুড়ানো প্রহর" ও প্রবন্ধ " ভুলতে বসা স্মরণে" পাঠকের মাঝে সমাদৃত।