টিনের চালে ঘুংগুর পরে নৃত্যরতা বালিকার রুপে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। চারিদিকে থৈ থৈ করে পানি।দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ তলিয়ে যায় সেই পানির নিচে।বাদল দিনের আকাশ সর্বদা অভিমানি বালিকার ন্যায় মুখ ভার করে থাকে।হঠাৎ ই কেঁদে উঠে আপন মনে।কাদা মেখে একাকার হয় গায়ের পথ-ঘাট।বর্ষাকালে ভরা যৌবনের উচ্ছাস ছাপিয়ে যায় নদীর দু-কূল।পাড় ভাঙ্গে স্রোতের টানে।
বৃষ্টি শেষে ভিজে থাকা প্রকৃতিকে দেখলে মনে হয়,কাঁন্নারত নিষ্পাপ শিশুর পুষ্পবৎ ভেজা মুখ ।কি স্বচ্ছ,মায়াবী।খরাদগ্ধ,ধূলোমলিন প্রকৃতি বৃষ্টির ছোঁয়ায় নবরুপে উদ্ভাসিত হয়।কদম ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয় রাতের বাতাস।সকল আবিলতা ধূয়ে-মুছে সর্গীয় আবহ বিরজমান চরাচর জুড়ে।বর্ষাকালে রাতে মেঘের ফাঁক গলে উঁকি দেয়া চাঁদের আলোকে মনে হয় কাঁচের জোস্না।
কেউ কেউ বলেন,বৃষ্টির দিনে নাকি 'মন কেমন করা' স্মৃতিরা প্রাণ খুজে পায়।তাইত অনেকে বৃষ্টি হলে পরে,ব্যালকনি বা বারান্দায় চেয়ার পেতে বসে বিগত দিনের বিষন্ন স্মৃতি হাতড়ে ফিরে।আমরা যাকে বলি দুঃখবিলাস।
আবার কারো কাছে বৃষ্টি মানে প্রকৃতির কোল জুড়ে আনন্দের কোলাহল,সুখের শবনম।যে সুখ ছুয়ে যায় প্রতিটি প্রকৃতিপ্রেমি অন্তরকে।যে শবনম গায়ে মেখে বালক-বালিকারা বৃষ্টিবিলাশে মেতে উঠে।
জানলার ফাঁক গলে হাত বাড়িয়ে সেই সুখকে ছুয়ে দিতে চায় কেউ।কেউবা রং চা কিংবা ধোয়া উঠা কফির সাথে প্রিয় কোন গান অথবা প্রিয় কোন লেখকের বই হাতে সেই সুখ খুজে ফিরে।
আবার কোথাও ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।সেখানে বাড়ির মা-চাচিরা বৃষ্টির দিনে চাল কিংবা বাদাম ভাজেন।পরিবারের সবাই মিলে খেতে খেতে নানান গল্পে মাতেন।সেদিন রাতের খাবার গোস্ত দিয়ে খিচুড়ি হওয়া চাই একটু বিলাসপ্রিয়দের।
তবে বৃষ্টির দিনে সবচেয়ে মজা হয় ছোটদের।বৃষ্টি নামার সাথে সাথে উঠানে নেমে পড়া।মায়ের বকুনি উপেক্ষা করে পাশের বাড়ির সমবয়সী বন্ধুর সাথে বল নিয়ে খেলায় মাত্ত হওয়া।অতঃপর বৃষ্টি থেমে গেলে,খেলা শেষে নদী বা পুকুরে ঝাপাঝাপি করে তবেই ঘরে ফেরা।কি যে অপ্রকশ্য সে আনন্দ।
এমন বাদলা দিনের ভেজা সন্ধ্যায় ব্যঙ্গের ডাক আর ঝিঝির একটানা কোরাস শুনতে শুনতে সত্যিই মন কেমন হয়ে যায়।ফেলে আসা এসব স্মৃতি বয়স বাড়লে বড় পোড়ায়।প্রকৃতির সাথে মনের কোণও ভিজে উঠে।